সবে বরাতের রাত্রি এবং হালুয়া রুটির মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া
প্রথানুসারে সবে বরাতের রাত্রি এবং হালুয়া-রুটি বণ্টনের উপর আমরা যে ধরনের গুরুত্ব দিয়ে থাকি, এই ধরনের গুরুত্বের কথা কখনোই কুর’আন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। এই রাত্রে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় বা আগামী বৎসর কে মারা যাবে অথবা কে জন্ম গ্রহণ করবে, তা নির্ধারিত হয় এই ধরনের কোন তথ্যই কুর’আনে বা সহিহ্ হাদিস দ্বারা বর্ণিত হয়নি। তবে সহিহ্ হাদিস কর্তৃক প্রমাণিত আছে যে, এই রাত্রে রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোরস্থানে গিয়েছেন এবং কবর জিয়ারত করেছেন। তাই এই রাত্রে আমাদের জন্য কবর জিয়ারতে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। সবে মেরাজ বা সবে বরাত সম্বন্ধে যে সকল কিতাব বা বক্তৃতা আলেম সমাজ কর্তৃক করা হয়ে থাকে, তার কোন ভিত্তি ইসলামে তথা কুর’আন-হাদিসে বর্ণিত নেই। সবে বরাতের ব্যাপারে যে হাদিস আছে, তা এতই দুর্বল যে, সহিহ্ হাদিস সংগ্রাহকদের দ্বারাই গ্রহণযোগ্য হয়নি। যার ফলে তাঁরা তাঁদের হাদিস সংকলনে এই সকল হাদিসকে স্থান দেননি।
সবে বরাতের রাত্রে ভারত উপমহাদেশের আরও একটি বৃহত্তম বিদ্য়াত হল মসজিদে হালুয়া রুটি দেয়া এবং সবশেষে আবার তা বণ্টন করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া। আসলে এই সময়ে আমাদের দেশের আলেম সমাজ দোয়া-মিলাদ করে কিছু পয়সা আয় করতে পারে, আর সে সাথে জাহেল মানুষেরা হালুয়া রুটির কে কি পেল বা পেল না, এই বিষয়ে হৈ-হুল্লোড় বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে পারে। কোন লোক যখন বাসা থেকে চাউলের রুটি নিয়ে এই সে গমের রুটি ভাগে পায়, তখনই বুঝা যায় যে, সবে বরাত পালন শুরু হয়ে গেছে। অন্যান্য দিন ফরজে আইন নামাজের জন্য মসজিদে মুসুল্লি না থাকলেও সবে বরাতের নফল নামাজের জন্য লোকের অভাব থাকেনা। যেহেতু আলেম সমাজ বক্তৃতায় বলে থাকেন যে, এই রাত্রেই সকলের আগামী বৎসরের হায়াত, মউত, ভাগ্য ইত্যাদি লিখা হয়, তাই তারা ফরজ নামাজ না পড়লেও ভাগ্যকে পাকা-পোক্ত করার জন্য এই রাত্রে হাজিরা দিয়ে সারা বৎসরের ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর জন্য পরিকল্পনা করে। তার পর-তো আবার হালুয়া রুটি আছেই। কাজেই হালুয়া রুটি দিয়েই পরবর্তী বৎসরের ভাগ্যের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
সবে কদরের রাত্রির সাথে সারা বৎসরের কোন রাত্রিরই তুলনা করা যাবে না। কারণ: মহান আল্লহ রব্বুল আলামীন নিজেই সূরা দুখানের মধ্যে সবে কদরের রাত্রিকে মহিমান্বিত রাত্রি হিসাবে ঘোষণা করেছেন। অতএব ভাগ্য সংক্রান্ত সকল বিষয়ই সবে কদরের রাত্রে নির্ধারিত হয়; সবে বরাতের রাত্রে নয়। তবে বৎসরের পাঁচটি উত্তম রাত্রির মধ্যে সবে বরাতের রাত্রি একটি। সে হিসাবে সবে বরাতের রাত্রিতে অতিরিক্ত ইবাদত বা দিনে রোজা রাখলে দোষের কিছু নেই; তবে বাধ্যতামূলক মনে করা সুন্নাতের পরিপন্থী, কারণ অনেক মুহাদ্দিসই উল্লিখিত পাঁচ রাত্রির হাদিসটিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ যার কোন ভিত্তি নেই, সে ধরনের আমল নিয়ে বেশি বাড়া-বাড়ি না করে ফরজ পালনের দিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লহ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন, তারপরও এ বিষয়ে আরও অধিক জানার জন্য ইন্টারনেট মাধ্যমে নীচের ওয়েব সাইট ভিজিট করুন:
http://en.allexperts.com/q/Islam-947/2008/8/Shabbe-baraat.htm
http://en.allexperts.com/q/Islam-947/Shabb-e-Baraat.htm